একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
১৯৫২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে মাতৃভাষা বাংলা করার দাবিতে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ রাজপথে তীব্র আন্দোলন শুরু করেছিল।
ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকত সহ অসংখ্য ছাত্র জনতা জীবন হারায়।
যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। নিচে একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে ১০ টি বাক্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতিকে বাংলা ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা প্রদান করে। শহীদ দিবস পালন করার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে ১০ টি বাক্য রয়েছে। যেমন-
- একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে পালিত একটি ঐতিহাসিক দিন।
- ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্ররা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
- একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের ফলে ১৯৫৬ সালে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়।
- ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
- এদিন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নানা অনুষ্ঠান হয়।
- শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
- সারা দেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি দপ্তরগুলোতে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়।
- একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অনুপ্রেরণার প্রতীক।
- একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় সচেতন থাকার শিক্ষা দেয়।
ভাষা শহীদদের সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ মাতৃভাষা বাংলা করার জন্য যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিল তাদেরকে ভাষা শহীদ বলা হয়।
- সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউল হলেন ভাষা আন্দোলনের শহীদ, যারা ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলার মর্যাদা রক্ষায় জীবন দিয়েছিলেন।
- তারা তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের উর্দু একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন।
- ২১শে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
- ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের ফলে ১৯৫৬ সালে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়।
- ঢাকার মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে সালাম, রফিক, বরকত ও জব্বার শহীদ হন।
- তাদের আত্মত্যাগের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে, যা বাঙালির ভাষা আন্দোলনের প্রতীক।
- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি গড়ে তোলে।
- তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।
- ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিক চেতনার প্রতীক হয়ে আছে।
- তাদের ত্যাগের জন্যই আমরা আজ মাতৃভাষায় স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি।
একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে ছোট গল্প
একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু একটি তারিখ নয়, একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া শহীদদের স্মরণে ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
- ভাষার আলো-
নাসির কাজ করত এক বিদেশি কোম্পানিতে। তার বস সব সময় বলতেন, “নিজের ভাষা জানার দরকার নেই, শুধু ইংরেজি জানলেই হবে।” কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারির দিন নাসির উপলব্ধি করল, যে জাতি নিজের ভাষাকে ভালোবাসে না, সে অন্য ভাষাতেও পূর্ণতা পায় না।
- লাল-সবুজ পতাকা-
তনিমের স্কুলে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আলোচনা সভা হচ্ছিল। শিক্ষক বললেন, ভাষা আন্দোলনের কারণেই আমরা স্বাধীনতার পথে এগিয়েছিলাম। তখন তনিম বুঝতে পারল, একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু মাতৃভাষা দিবস নয়, এটি আমাদের জাতীয় চেতনারও সূচনা।
- মিনারের ফুল-
সকালবেলা শহীদ মিনার পরিষ্কার করছিল আনোয়ার চাচা। ছোট্ট শিহাব এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, চাচা আপনি কেন এত যত্ন করে শহীদ মিনার সাজাচ্ছেন? চাচা মৃদু হেসে বললেন, এই মিনার শুধু পাথর নয়, এটি আমাদের ভাষার প্রতীক।
- খোকনের প্রতিজ্ঞা-
খোকন বাংলার প্রতি খুব উদাসীন ছিল, সে সব সময় ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করত। তবে বাসা শহীদদের গল্প শুনে তার হৃদয়ে আলোড়ন উঠল। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের স্মরণে আমি বাংলা ভাষাকে সম্মান দেব।
- পাথরের অক্ষর–
শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে রাজিব ভাবছিল, ভাষার জন্য শহীদরা যদি জীবন দিতে পারেন, তবে সে কেন নিজের ভাষাকে ভুলে যাবে? সে সিদ্ধান্ত নিল, আজ থেকে সে বাংলায় শুদ্ধভাবে কথা বলবে এবং বাংলা ভাষার গুরুত্ব সবার কাছে ছড়িয়ে দেবে।
ভাষা শহীদদের নিয়ে কবিতা
বাংলার আকাশে যখন একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর নামে, তখন শ্রদ্ধেয় শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার ফুলে ভরে ওঠে। ভাষা শহীদদের নিয়ে অনেক কবি বিভিন্ন কবিতা লিখেছেন। যেমন-
- শহীদ মিনারের কান্না-
শহীদ মিনার নীরবে বলে,
র*ক্ত ঝরেছে এই পথ চলে।
ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন,
আজও গেয়ে চলে জীবন সংগীত।
- সালাম-রফিকের শপথ-
সালাম-রফিকের র*ক্তে লেখা,
বাংলা ভাষার জয়গান বয়ে চলে।
ভাষার জন্য শহীদ যারা,
তাদের ত্যাগে পথ এগিয়ে চলে।
- শহীদের স্বপ্ন-
তোমরা দিলে র*ক্ত তোমার,
আমরা পেলাম মাতৃভাষা।
তোমরা হলে ইতিহাসের আলো,
জ্বালিয়ে দিলে চেতনার আশা।
- শহীদের র*ক্তে বাংলা অমর-
র*ক্ত দিয়ে গড়লে ভাষার মিনার,
আজও বয়ে চলে তারই অহংকার।
তোমাদের ত্যাগে মুক্তি মিলেছে,
বাংলা ভাষা চির অমর হয়েছে।
- মাতৃভাষার দীপশিখা-
তোমরা ছিলে অন্ধকারে আলো,
বাংলার ভাষায় আনলে আলো।
শহীদের র*ক্তে লেখা ইতিহাস,
বাংলা রবে শত শত বছর আশ।
শেষ কথা
একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে ১০ টি বাক্য দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করা যায়। ফেব্রুয়ারি ২১ তারিখ ঘটে যাওয়া ঘটনার অনুভূতি প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। একুশে ফেব্রুয়ারি নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে একুশের চেতনা ধারণ করার অনুপ্রেরণা দেয়। ধন্যবাদ।